মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী ওরা

ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী ওরা

.

মো. রুবেল আহমেদ 

ছাগল পালন করে কিভাবে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন, টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌর শহরের বসুবাড়ীর বাসিন্দা শিল্পী রানী (৪৫) এবং হাটবৈরান গ্রামের আন্না বেগম (৩২) সেই চিত্র উঠে এসেছে আজকের অনুসন্ধানে।

সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৪ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উন্নত জীবনের সন্ধানে (উষা) থেকে বিনামূল্যে ১টি মাঝ বয়সী ছাগল এবং ছাগল পালনের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন, বসুবাড়ীর বাসিন্দা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অমল চন্দ্র । উন্নত জাতের যমুনা পাড়ি ছাগল (রাম ছাগল)টি অমল চন্দ্র ও তার সহধর্মিণী শিল্পী রানী সযত্নে লালন পালন করেন। সেই ছাগলটি প্রথম বছর ১টি বাচ্চা দিলেও পরেরবার একাধিক বাচ্চা দেয়। 

এভাবেই বংশ বিস্তার করে এখন পর্যন্ত ২০টির বেশি ছাগল জন্ম নেয়। এর থেকে ১৪-১৫টির মতো ছাগল দেড় লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করে, ৬টিনের ছাপড়া ঘর থেকে বড় ৪চালা টিনের ঘর দিয়েছেন তারা। অমল চন্দ্র ৭মাস আগে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন।

শিল্পী রানী বলেন, শেষ সম্বল হিসাবে রেখে গেছেন ৩টি ছাগল। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৪০হাজার টাকা। কয়েকটি ছাগল অসুখে মারা গেছে। 


একই সংস্থা থেকে ২০২২সালে ১টি ছাগল পেয়েছিলেন, হাটবৈরান গ্রামের ভ্যান চালক শাহআলমের স্ত্রী আন্না বেগম।

এপর্যন্ত ৪টি ছাগল বিক্রি করেন, সাথে কিছু টাকা যোগ করে ১টি উন্নত জাতের বকনা গরু কিনেছেন। ২টি ছাগল অসুখে মারা গেছে এবং এখনো ১টি খাসি রয়ে গেছে। যার বর্তমান আনুমানিক বাজার মূল্য ১৫হাজার টাকা। 

আন্না বেগম বলেন, আমার এক মেয়ে ৭ম শ্রেণী ও আরেক মেয়ে ৩য় শ্রেণীতে পড়ে। ১টা ছাগল রেখে দিয়েছি, তাদের পড়ালেখার জন্য টাকার দরকার হলে এটি সহায়ক হবে।


জানা যায়, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন(বিএনএফ) এর অর্থায়নে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিশেষ জরিপ পরিচালনা করে দরিদ্র পরিবারের সন্ধান করেন উন্নত জীবনের সন্ধানে (উষা)। দরিদ্রদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২০০টি সেলাই মেশিন এবং প্রতিবছর ছাগল বিতরণ করে আসছে।


উষা'র নির্বাহী পরিচালক মো. ইব্রাহীম খলিল বলেন, দারিদ্র্যতা দুর করে মানুষকে স্বাবলম্বী করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অডিট করা হয়। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন থেকে ইউএনও, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়।

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

বন্ধুর নয়নে ঘুম

বন্ধুর নয়নে ঘুম

বন্ধুর নয়নে ঘুম

     মো. রুবেল আহমেদ 

টলটল ঘুম তাহার আসিয়াছে দুই নয়নে 

সুখের স্বপ্ন নেমে আসুক তাহার এই শান্তির শয়নে 

ছটফটে মন মোর আছে বন্ধুর অপেক্ষায় 

জানিনা হঠাৎ কেন বা কোন প্রতিক্ষায়।


হঠাৎ করেই হয়েছি মোরা বন্ধুত্বের বন্দি

ইহা হোক চিরস্থায়ী, না থাকুক কোন সন্ধি

বন্ধু যদি হও তুমি, সর্বদা রেখো মনে 

বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে পারে বলো কজনে?


ঘুমের দেশে আছো বন্ধু নীরবে নির্জনে 

বন্ধু তোমায় পড়ছে মনে এই না গভীর নিশীথে

ঝিঁঝিঁ পোকা জেগে আছে, শেয়াল দিচ্ছে হাঁক 

ঘুমের মাঝেও বন্ধুর মনে আমার জন্য কাটুক দাগ।

মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

এতিমখানার শিক্ষার্থীদের জন্য খাসি উপহার দিলেন আমেরিকা প্রবাসী

এতিমখানার শিক্ষার্থীদের জন্য খাসি উপহার দিলেন আমেরিকা প্রবাসী

এতিমখানার শিক্ষার্থীদের খাওয়ার জন্য খাসি ছাগল উপহার দিলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শুশুয়া ভিল এর প্রতিষ্ঠাতা ও আমেরিকা প্রবাসী মাসুম মাহবুবুর রহমান। 

সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকাল ৪টায়, গোপালপুর উপজেলার নগদাশিমলা ইউনিয়নের মজিদপুর নূরিয়া নিজামিয়া কওমী মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের জন্য; প্রতিনিধির মাধ্যমে ১৪হাজার টাকা মূল্যের খাসি ছাগলটি পৌঁছে দেন। 

অত্র এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা মো. জয়নাল আবেদীনসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ উপহারটি গ্রহণ করেন। পরে আমেরিকা প্রবাসী মাসুম মাহবুবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্য মোনাজাত পরিচালনা করেন। 


উল্লেখ্য, চর শুশুয়া গ্রামের সাবেক যুগ্ম সচিব বাহাজ উদ্দিনের জৈষ্ঠ্য পুত্র, আমেরিকা সিটিজেন মাসুম মাহবুবুর রহমান হিউম্যান কনসার্ন ইউএসএ'র সিইও হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে নির্যাতিত মুসলমান, মায়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ছাড়াও, সারাবিশ্বে পিছিয়ে পরা মুসলমানদের উন্নত জীবন গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগদান করেন।

এছাড়াও নাড়ির টানে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শুশুয়া ভিল এর মাধ্যমে চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসাসেবা, বৃক্ষরোপণ, শীতবস্ত্র বিতরণ এবং দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। 

রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

গোপালপুরে শুশুয়া ভিল এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

গোপালপুরে শুশুয়া ভিল এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি


"বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, গাছ কাটলে সর্বনাশ। সকল মানুষ, পশুপাখি, অক্সিজেনে বেঁচে থাকি" স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শুশুয়া ভিল এর উদ্যাগে, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা নগদাশিমলা ইউনিয়নের মাইজবাড়ীসহ বিভিন্ন সড়কের দু'পাশে নিম, কৃষ্ণচূড়া, চালতা,তাল, কাঠ বাদাম গাছের চারা 

রোপন করা হয়। এবং প্রতিটি গাছের চারা শক্ত খুঁটিতে বেঁধে দেওয়া হয়। শুশুয়া ভিল এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, আমেরিকা প্রবাসী এলিজা সুলতানার পরিকল্পনা ও অর্থায়নে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

রবিবার (৩নভেম্বর) বিকাল ৪টায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ইউএনও (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও এসিল্যান্ড মো. নাজমুল হাসান।  উপস্থিত ছিলেন গোপালপুর উপজেলা বিএনপি'র সহ-সভাপতি ও নগদাশিমলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সম্পাদক সন্তোষ কুমার দত্ত, শিমলা জামিরুন্নেছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আয়নাল হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

শুশুয়া ভিল এর প্রতিষ্ঠাতা মাসুম মাহবুব জানান, মানবকল্যাণে শুশুয়া ভিল অতিতের মতো আগামীতেও কাজ করবে।

শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪

প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকিয়ে রেখেছেন মুদ্রাক্ষর টাইপিং

প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকিয়ে রেখেছেন মুদ্রাক্ষর টাইপিং

 

মো. রুবেল আহমেদ. 

যখন ছিলোনা কম্পিউটার, প্রিন্টার মেশিন। খট খট শব্দে টাইপিং করা মুদ্রাক্ষরের জনপ্রিয়তা ছিল তখন তুঙ্গে। বিভিন্ন আবেদন, সরকারি অফিসের নথিপত্র, স্কুল-কলেজের প্রশ্নপত্র, চিঠি লেখার কাজে ব্যবহৃত হতো মুদ্রাক্ষর মেশিন। কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে, গুরুত্বহীন হয়ে যায় মুদ্রাক্ষর শিল্প।


শত প্রতিকূলতার মাঝে মুদ্রাক্ষরিক পেশা টিকিয়ে রেখেছেন মো. মজিবর রহমান (৫০)।  টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার, হাদিরা ইউনিয়নের মাহমুদপুর বাজারের, গ্রামীণ ব্যাংকের গেইটে ২০০৭ সাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৮-১০পর্যন্ত ২ঘন্টা, খোলা আকাশের নিচে বসে টাইপিং করেন তিনি। স্থানীয়দের হাতেগোনা ২/১টা কাজ করার পাশাপাশি। জমি বন্ধক রাখার স্ট্যাম্প কিনে, নাম ঠিকানার ঘর ফাঁকা রেখে টাইপিং করে সাইকেলে চড়ে গোপালপুর ও ধনবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন মুদি দোকানে বিক্রি করেন তিনি। এতে তার দৈনিক আয় হয় ৮০-১০০টাকা।


সরেজমিনে জানা যায়, মুশুর্দী ইউনিয়নের বাগুয়া গ্রামের মৃত আব্দুস ছামাদের মেঝ ছেলে মজিবর রহমান। তিনি ১৯৮৬সালে ধনবাড়ী মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইসএসসি) পাশ করেন। এরপর ঢাকাতে টিউশনি শুরু করেন। একপর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্বরে কলা বিক্রি শুরু। সেখানেই একজনের অনুরোধে ১৯৯৪সালে মুদ্রাক্ষরিক কাজ শিখেন। এরপর ১৯৯৭সালে নিজের মেশিন নিয়ে বসেন আদমজীতে। 

আদমজীর সেই গৌরব হারানোর পর বাড়ি ফিরেন তিনি। 

এসব কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে স্থানীয়রা তাকে পাগল বলে সম্বোধন করায়, বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারেনি বলে জানান তিনি।


মো. মজিবর রহমান বলেন, বর্তমান মেশিনটি ২০১৯ সালে ১৫হাজার টাকায় ঢাকা থেকে এনেছি। প্রতিদিন যা আয় করি, তা দিয়ে চা খরচ চলে যায়। সংসার না থাকায় তেমন চিন্তা করতে হয়না। ব্যাপক চাহিদার পেশাটির গৌরব হারানোয় আফসোস করেন তিনি। এটা যন্ত্রপাতি পেতেও বেগ পেতে হয় এবং উচ্চ মূল্যে কিনে আনতে হয়।


জনতা পেপার হাউজের মালিক আ. সালাম খান  বলেন,  ৯০এর দশকে মুদ্রাক্ষরের ব্যাপক চাহিদা ছিল। খাদ্য গুদামের সামনে হক সাহেবের দোকানে ৫টি মেশিন ছিল। ওখানে সবসময় ভীড় লেগেই থাকতো। কম্পিউটার প্রচলনের পর এসব গোপালপুর থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।


উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এখলাস মিয়া বলেন, এদের সহযোগিতার জন্য এখন এরকম কোন কিছু নাই, তবে ভবিষ্যৎ এরকম কিছু এলে তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতা করা হবে।

সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

চরের শস্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে দরকার প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি

চরের শস্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে দরকার প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি


মো. রুবেল আহমেদ

বর্ষাকালে যমুনা নদীর স্রোতের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা, চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন অনেকটাই কঠিন। 

নদীর একুল গড়ে তো ওপার ভাঙ্গে। ধু ধু বালুচরে নানা প্রতিকূলতায় বেঁচে থাকা, চরাঞ্চলের মানুষ শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবায় অনেকটাই পিছিয়ে। প্রতিকুলতার কারনে ভালো মানের শিক্ষক ও চিকিৎসকদের চরাঞ্চলের প্রতি অনীহা পুরনো। নদী অববাহিকায় জেগে উঠা চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সমতলের কৃষকরা ধান, পাট, সরিষা চাষাবাদে সীমাবদ্ধ থাকলেও । টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার একটি অংশ এবং ভুঞাপুর উপজেলার বৃহৎ অংশ যমুনা নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা; নানান প্রতিকুলতা ডিঙ্গিয়ে উৎপাদন করে সব ধরনের শাক সবজি ও শস্য। যমুনা নদীর চরের বেলে মাটিতে বাম্পার ফলন হয় ধান, পাট, সরিষা, বাদাম, ভুট্টা, মরিচ, তিল, তিষি, কাউন। খেসারি, মশারি, মাস কালাই, মুগসহ বিভিন্ন রকমের ডাল। জিরা ব্যতিত পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, আদা, কালো জিরা, ধনিয়াসহ সবধরনের মশলা। গবাদিপশুর খাদ্য হিসাবে বিভিন্ন জাতের ঘাস এবং তামাক পাতাসহ বিভিন্ন ধরনের অর্থকরী ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এছাড়াও চরাঞ্চলের কৃষকদের গবাদিপশুর লালনপালনে সফলতা চোখে পড়া মতো।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছরের ৩মাস পানির নিচে ডুবে থাকা চরাঞ্চল জাগলে, শুরু হয় ধান, বাদাম, ভুট্টা লাগানোর তোরজোর। চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষে ব্যাপক সফলতা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান কৃষকরা।

শীত মৌসুমে, ফলে সব রকমের শাকসবজি, ডাল এবং মসলা।  বসন্তে শুরু হয় পাট, তিল, তিসি বুননের তোড়জোড়। 

ইদানিং ক্যাপসিকাম চাষেও ঝুঁকছে তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব ফসলের বাম্পার ফলন হয় চরের বালু মাটিতে। অতি খরা এবং শৈত্যপ্রবাহে ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। হাত বাড়ালেই মিলে না সার, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ। এসবের জন্য যেতে হয় নলিন হাট, গোবিন্দাসী হাট এবং ভুঞাপুর শহরে। চরাঞ্চলে সেচ সঙ্কট একটি বড় সমস্যা।

দুর্গম চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক, নৌকার উপর নির্ভরশীল। কৃষকরা উৎপাদিত ফসল চর শুশুয়া, সোনামুই, নলিন,পিংনা গোবিন্দাসীসহ চরের কয়েকটি হাটে স্বল্প দামেই বিক্রি করে থাকেন। এতে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া মধ্যস্বত্বভোগী পাইকাররাই বেশি লাভবান হয়।


চরাঞ্চলের কৃষকদের দাবি, আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকারের উচিৎ চরাঞ্চলের কৃষির প্রতি বিশেষ নজর রাখা। কৃষিতে ভর্তুকি, ঋণ ও প্রণোদনা বাড়ানো। সমতলের কৃষি এখন অনেকটাই প্রযুক্তি নির্ভর। এদিক থেকেও চরের কৃষকরা অনেক পিছিয়ে। চরাঞ্চলের কৃষিতে প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ানো এবং উৎপাদিত পণ্যের সঠিক বিপণন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা। 



শুশুয়া ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি মোমিনুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে ভর্তুকি মূল্যে সার, বীজ প্রদান করার পাশাপাশি। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে । কালাই মাড়াই, ভুট্টা মাড়াই মেশিনসহ কৃষি প্রযুক্তির সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।

শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪

নীতি নির্ধারণে কৃষকের সম্পৃক্ততা থাকুক

নীতি নির্ধারণে কৃষকের সম্পৃক্ততা থাকুক


মো. রুবেল আহমেদ.

কৃষি প্রধান বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে কৃষকের রয়েছে অসামান্য অবদান। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে, হাড়ভাঙা পরিশ্রমে কৃষকের অসামান্য অবদানের জন্যই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে বাংলাদেশ। পেঁয়াজ উৎপাদনে পিছিয়ে থাকলেও। ধান, ফলমূল, শাকসবজি, দুধ,মাছ, মাংস এবং অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের কৃষকেরা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করছে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে প্রতিদিন জোগান দিচ্ছেন ১৮কোটি মানুষের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ ও আহারের। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যেই কৃষকের এতো অবদান। সেই কৃষককে রাখা হয় না রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে। কেউ কাছে থেকে জানতেও চায় না, কৃষকের সুবিধা-অসুবিধার কথাগুলো। অতীত বা বর্তমানের সরকারে ব্যবসায়ী, শ্রমিকনেতা, ধর্মীয় নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও। কখনোই একজন কৃষককে সরাসরি সরকারের অন্তর্ভুক্ত করার নজির নেই। বিষয়টি হতে পারে শিক্ষিত/অশিক্ষিতের বা গায়ে লেগে থাকা ঘামের গন্ধের। তাই বলে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষককে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কারন রাজধানীতে উঁচু তলায় বসবাস করা মানুষের শেকড় বাকড় খুঁজলে অবশ্যই পাওয়া যাবে কৃষকের সম্পৃক্ততা। আর বর্তমানে উচ্চ শিক্ষিত অনেক যুবক স্বাবলম্বী হতে কৃষি বা খামারে সম্পৃক্ত হচ্ছে।

উদাহরণ স্বরূপ যদি বলি, টাঙ্গাইলের গোপালপুর একটি কৃষি প্রধান অঞ্চল। বছরে ২বার ধান চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন হয় এখানে। স্থানীয়রা কৃষকেরা বরাবরই অভিযোগ করে আসছে বীজ, কীটনাশক, সার কেনা এবং শ্রমিকের উচ্চ মূল্যের কারণে; চাষাবাদের খরচ সাথে উৎপাদিত ফসলের মূল্যের ঘাটতি দেখা দেয়। তবুও কৃষক নিজের প্রয়োজন ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে চাষাবাদ করে যাচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী সারাদেশেই, বিগত কয়েক বছর ইরি মৌসুমে ব্রি২৮-ব্রি২৯ জাতের ধানে ব্লাষ্টের আক্রমণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বন্যা, বর্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গনমাধ্যমে প্রচারিত কৃষি ভিত্তিক ২/১টা অনুষ্ঠান ছাড়া, কৃষকের সুবিধা-অসুবিধার কথা সরাসরি শোনার উপায় নেই। সমস্যা চিহ্নিত করে, খাদ্যেশস্যর উৎপাদন আমদানিমুখী থেকে রপ্তানিমুখী করতে। রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে সরাসরি কৃষকের সম্পৃক্ততা দরকার। 

যেহেতু দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তনে একটা সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। উপদেষ্টাদের বক্তব্যে আমরা আশ্বস্ত হচ্ছি বিভিন্ন খাতে সংস্কার আসবে। তাই আগামীতে কৃষি ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে। সরাসরি মতামত জানানোর সুযোগ করে দিতে, কৃষকের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী হতেই পারি।