দর্শক হলে আসবে না, দর্শক এই কন্টেন্ট দেখবে না, ঐ কন্টেন্ট দেখবে না।
এই কথাগুলো আমরা আসলে কীভাবে বলি? আমাদের কাছে কি ডাটা সাইন্স আছে যে আমরা ডেমোগ্রাফি বিচার করে এইসব আলাপ করি?
আমরা কীভাবে বিচার করি, দর্শক একটা নির্দিষ্ট ধরনের সিনেমা দেখতেই হলে যায়? আমরা কীভাবে বিচার করি দর্শক শুধুমাত্র নাচ, গান, ফাইটিং দেখতেই হলে যায়?
আমাদের সিনেমার যে ভগ্নদশায় আমরা আছি, সেখানে দাঁড়িয়ে এসব বলাই যায় না।
শুরুতে আমরা কি এই প্রশ্নটা করি, আমরা কি আপডেটেড? আমরা কি going up or going down?
এইটিজ থেকে আর্লি নাইন্টিজের কথা যদি বলি, সেসময়ে অনেক পারিবারিক আর সামাজিক সিনেমা হয়েছে, যার মাঝে ফাইট,নাচ,গান সেভাবে ছিল না।যেমন গোলাপি এখন ট্রেনে, সুন্দরী, ভাত দে, এই ঘর এই সংসার- এরকম অনেক সিনেমা। আমি নিজে এসব সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছি। হলে উপচে পড়া মানুষ। শুক্রবার বা বন্ধের দিন সপরিবারে সবাই এসব সিনেমা দেখেছে। আমার পাশের বাসার মানুষজন, আমার ভাইবোনেরা দেখেছেন। তখন টেকনোলজিও এত ভালো ছিল না, যতদূর মনে পড়ে, এইটিজের পরেই আংশিক রঙিন সিনেমা এসেছে। সেই সাদাকালো বা আংশিক রঙিন সিনেমা দেখতে মানুষের এত ভীড়?
কী দেখতে যেত? গল্প দেখতে যেত?
আবার যদি বলি, পাত্র পাত্রীর কথা, মুখস্থ একত্রে অনেক নায়ক নায়িকার নাম বলে দেয়া যায়। রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, মাহমুদ কলি, জাফর ইকবাল, উজ্জ্বল, জসীম- একটানা বলে দেয়া যায়।
নায়িকার কথা বললে- শাবানা, ববিতা, কবরী, নূতন, চম্পা, অলিভিয়া ও আরও অনেকে।
আজকে ২০২২ এ এসে আমরা তিন-চারজন নায়ক নায়িকার বাইরে আলাপই করতে পারছি না। কেন পারছি না? তাহলে কি আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনেক এগিয়ে গেছে নাকি পিছিয়ে গেছে?
এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দর্শককে হলে আহ্বানের জন্য ইনভিটেশন কার্ড পাঠানো বাকি রাখতে হয় শুধু, যে হলে যান, হলে যান, হলে যান!
আগে ফেসবুকও ছিল না। রেডিওতে বিজ্ঞাপন, পত্রিকায় কিছু বিজ্ঞাপন, রাস্তায় পোস্টার- এই তো ছিল প্রচারণা।
মানুষ আসলে সিনেমামুখী ছিল। এই যে সিনেমামুখী মানুষ সিনেমাবিমুখ হল- এই দোষটা কাদের? দর্শকের না। সেটা আমাদের। আমরা যারা সিনেমা বানাই, যারা প্রোডিউস করছি- সবাই মিলে দায়ী।
মানুষ ৬টা কমন ইমোশন দিয়ে তৈরি হয়েছে। কোন দর্শক সেই ৬ টা ইমোশনের বাইরে না। ইমোশনগুলো কি?
Happiness, Sadness, Fear, Anger, Disgust, Surprise- এসবের বাইরে কেউই না। একটা গল্পে বা সিনেমায় এই ৬টার মাঝে একটা বা একের অধিক ইমোশন ট্রিগার করলেই সেই সিনেমা দেখতে দর্শক বাধ্য। কারণ কেউ সুখী হতে সিনেমা দেখতে চায়, কেউ দুঃখবোধকে পছন্দ করে, কেউ ভয় পেতে চোখ বন্ধ করে সিনেমা দেখেন, কেউ হিরোর এংরি ইমেজকে দেখতে সিনেমা দেখেন, কেউবা ফ্যান্টাসি দেখে সারপ্রাইজড হতে পছন্দ করেন- এই তো?
তো আমরা যদি আমাদের গল্প বলি, নিজের দেশের গল্প বলি- আমার মনে হয় তাহলেই ইমোশনগুলো খুব সহজেই মানুষের ভেতরে চলে যাবে। আমরা যেন ঐ গল্পটা বলার চেষ্টা না করি, যে একটা কিক করলাম আর ৩০ গজ দূরে গিয়ে পড়লো, পা ফেললেই ধূলোর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কারণ এগুলো আমাদের গল্পই না।
অনেক কথা বললাম। সবগুলোই ব্যক্তিগত মতামত। অবশ্যই অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। আজকে সিনেমা নিয়ে যেসব কথা বললাম, নিম্নগামী একটা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কথা বললাম, সেই ইন্ডাস্ট্রির গেইম চেঞ্জার হচ্ছে- পরাণ ও হাওয়া- এই দুটো সিনেমা।
আমার মনে হয়, পরাণ ও হাওয়ার জন্য আমাদের শুভকামনাটাই শুধু করা উচিত। ভুলত্রুটি খুঁজে বের করব সময় এলে। আপাতত ভালো দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করি, যেন আগের মত দর্শক পরিবার বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে হলে যায়। হইহট্টগোল করুক, হলভর্তি মানুষ থাকুক।
একটা সিনেমা বানাতে ডিরেক্টর থেকে শুরু করে প্রোডাকশন বয়ের যে পরিমাণ পরিশ্রম যায় একমাস বা দেড়মাস, সেটা যারা বানান তারাই জানেন। তাই এই সময়ে উৎসাহটা জরুরি।
আর ভালোকে ভালো বলতে কোন ক্ষতি নেই।
শুভকামনা পরাণ ও হাওয়া টিমকে। আবারও বলব, এই মুহুর্তে এই দুটো সিনেমা আমাদের জন্য গেইম চেঞ্জার।
- রায়হান খান, নির্মাতা
0 মন্তব্য(গুলি):