সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৩

সৌর বিদ্যুৎ এর Solaric 3G Solar Optimizer কি এবং কেন



প্রচলিত ব্যবস্থায় সৌরবিদ্যুতের ব্যবহারে বাতি,ছোট্ট পাখা চালিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়, সৌর বিদ্যুৎ ঘর থেকে একটু দূরে রান্নাঘর, গোয়ালঘর, শৌচাগারে বাতির সুযোগ থাকে না৷ সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপও চার্জ দেওয়া যায় না৷

সৌরবিদ্যুতের এই সমস্যার সমাধানে আশার আলো দেখিয়েছেন আমাদের দেশের তড়িৎ প্রকৌশলী জনাব দিদার ইসলাম৷ সমস্যাটির গভীরে প্রবেশ করে তিনি দেখলেন, প্রচলিত ব্যবস্থায় ব্যবহৃত বিদ্যুতের ভোল্টেজ মাত্র ১২ ভোল্ট৷ এতে কেবল কয়েকটি বাতি কিংবা পাখা চালানো ব্যাতিত আর কিছুই সম্ভব নয়৷ আবার সংযোগস্থল থেকে সর্বোচ্চ ২০ ফুটের বেশি দূরত্বে এগুলো চালানোও যায় না৷ রাজধানীর বারিধারায় নিজ কার্যালয়ে বসে দিদার ইসলাম সেই সমস্যা ও তার সমাধানের পথ বের করলেন এবং ব্যাখ্যা দিলেন৷ বললেন- ‘আমি ভাবলাম যদি বিদ্যুৎপ্রবাহ ১০ গুণ কমাতে পারি তাহলে তারের মধ্যে শক্তিক্ষয় কমে যাবে ১০০ গুণ। বিদ্যুৎ প্রবাহের মান কমিয়ে আনতে Voltage টা বাড়িয়ে দিতে পারি। আর ভোল্টেজ যদি ১০ গুণ বাড়ানো যায়, বিদ্যুৎ প্রবাহ ১০ ভাগের ১ ভাগে নেমে আসবে।’ যে চিন্তা সে কাজ! দিদার ঠিক এই কাজটিই করলেন। তিনি একটি ছোট্ট Circuit ডিজাইন করলেন, যা ব্যাটারির ১২ ভোল্টকে ১০ গুণ বাড়িয়ে ১২০ ভোল্টে Convert করে৷ এতে বিদ্যুৎপ্রবাহ কমে গেল ১০ গুণ, মানে শক্তিক্ষয় কমল ১০০ গুণ! ফলে প্রতি মিটার ২২ টাকা দামের মোটা তারের পরিবর্তে প্রতি মিটার ৩ থেকে ৫ টাকা দামের চিকন তার ব্যবহার করে ১০০-১৫০ ফুট পর্যন্ত বিদ্যুৎপ্রবাহ টেনে নেওয়া যায়। এ ব্যবস্থার নাম দিলেন ''সোলার অপটিমাইজার''। এটি একই সঙ্গে ব্যাটারি চার্জারের কাজও করে। তাই আলাদা চার্জার এর দরকার হয়না। বানিয়েছেন এমন একটি বৈদ্যুতিক পাখা, যা ১২ ভোল্টে মাত্র ২০ ওয়াট শক্তি খরচ করে (সাধারণ বৈদ্যুতিক পাখার শক্তি খরচ ৮০-১০০ ওয়াট)। কেবল তাই নয়, তাঁর তৈরি তিন ওয়াটের এলইডি বাতিতে কোনো ড্রাইভার (টিউবলাইটের ব্যালাস্টের অনুরূপ) লাগে না। 

 নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেশে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রচলনের সমন্বয়কারী Infrastructure Development Company Limited (IDCOL) দিদারের এ ব্যবস্থার অনুমোদন দেয় ২০১২ সালের শেষ দিকে। আর বিশ্বব্যাংকের সহায়ক International Finance Corporation (IFC) দিদারের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে প্রায় ৮ কোটি টাকা। বাড্ডাতে গড়ে ওঠে দিদারের কারখানা। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার বাড়িতে এই ব্যবস্থায় সৌরবিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ যার দাম পড়েছে গড়ে ১৪,৫০০ থেকে ৪২,৫০০ টাকা৷ এখন প্রতি মাসে ৮ হাজার বাসাবাড়িতে একইভাবে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে৷ মাগুরা সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম ও রওশন আরার সাত সন্তানের মধ্যে পঞ্চম দিদার ইসলাম।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) থেকে ১৯৯২ সালে তড়িৎকৌশলে স্নাতক হয়ে বুয়েটেই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর ১৯৯৬-৯৭ সালে ‘কুইক রেডিও’ নামের একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দেন। কুইক রেডিওসহ যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১০টি পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী দিদার। দেশেও সোলার সিস্টেমের চারটি পেটেন্ট রয়েছে তাঁর।
 দিদারের সব সময়ের প্রেরণা তাঁর মা। ‘মা আমাকে বললেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকলে টাকা-পয়সা অনেক হবে। কিন্তু দেশে গিয়ে যদি কিছু করতে পারিস তাহলে সেটা আরও ভালো হবে।’ ২০০৭ সালে দেশে ফিরে প্রথমে একটি ইলেকট্রনিক সার্কিট ডিজাইনের প্রতিষ্ঠান চালু করেন। যেখানে প্রায় ২০ জন বুয়েট প্রকৌশলীকে সঙ্গে নিয়ে ১০টির মতো নতুন চিপস ডিজাইন করেন। তবে, চিপসের মূল বাজার তাইওয়ান হওয়াতে এই কাজে দিদার নির্ভরশীল ছিলেন তাইওয়ানিদের ওপর।এরপর নজর দিলেন বাড়িতে সৌরবিদ্যুতে।

 ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রতিষ্ঠান সোলারিক ডট কম। বর্তমানে ফ্যাক্টরি, ডিজাইন সেন্টার ও প্রধান কার্যালয়ে ২৫৩ জন কর্মী কাজ করছেন। স্ত্রী কম্পিউটার প্রকৌশলী ফাহমিদা সুলতানা, পুত্র রোহান ইসলাম এবং মেয়ে নাজিয়া ইসলামকে নিয়ে দিদারের ছোট্ট সংসার। তৃতীয় প্রজন্মের সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমাদের গ্রামগুলোকে আলোকিত করার লক্ষ্যে তিনি এখন কাজ করছেন৷

SHARE THIS

Author:

সঠিক তথ্য পেতে সবসময় সমাবেশ ডটকমের সাথে থাকুন।

0 মন্তব্য(গুলি):