রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

আধুনিকতায় হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলা

 মো. রুবেল আহমেদ

যান্ত্রিকতার আধুনিক জীবনে 'ক্রীড়াই শক্তি, ক্রীড়াই বল' শ্লোগানটি ভুলতে শুরু করেছে নতুন প্রজন্ম।

 'কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যারে পাবি তারে ছোঁ' ভুলে শিশু কিশোররা মত্ত মুঠোফোন নিয়ে। অধিকাংশ শিশু কিশোররা জানেই না হাডুডু কি এবং এটা আমাদের জাতীয় খেলা।

বিভিন্ন গ্রামে একসময় বিকালে গ্রামীণ মানুষ দলবেঁধে হাঁডুডু, গোল্লাছুট, ঢাংগুলি, মারবেল, বৌছি, রশিটান, ইচিং-বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, লাঠিখেলা, দাঁড়িয়াবান্ধা, লুকোচুরি, মোরগ লড়াই, কড়ি, ধাপ্পা, কুতকুত, এলাডিং বেলাডিং, সাত চাড়া ইত্যাদি খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকতো। এতে স্বাস্থ্য ও মন ভালো রাখার পাশাপাশি অপরের সাথে তৈরি হতো সুসম্পর্ক ও সম্প্রীতির বন্ধন। অথচ নতুন প্রজন্মের অধিকাংশ শিশু কিশোররা এসব খেলার সাথে পরিচিতই নয়।

এক সময় গ্রাম-গঞ্জে জমজমাট ও উৎসবমুখর পরিবেশে হতো ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলা। প্রতিটি গ্রামে তৈরি হতো একাধিক হাডুডু খেলার দল। কয়েক গ্রামের বাছাইকৃত সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে তৈরি হতো আলাদা দল, এরা অন্য ইউনিয়ন বা অন্য থানা এলাকায় হায়ারে খেলতে যেতো। সেরা খেলোয়াড়দের সমাজে থাকতো আলাদা নামডাক, সম্মান।

বর্তমানে শিশু কিশোর ও তরুণদের স্মার্টফোন হাতে দল বেঁধে আড্ডা দিতে দেখা যায়। এরা কেউ আসক্ত নিষিদ্ধ গেমসে, কেউবা ঢুকে পরছে ডার্ক ওয়েবে । 

এতে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয় ও তরুণরা অনলাইন জুয়াসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। 

চর চতিলা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রশিদ জানান, জৈষ্ঠ্য ও অগ্রাহায়নে ধান কাটার পর খালি মাঠে প্রতিটি গ্রামেই উৎসবমুখর পরিবেশে হতো হাডুডু খেলা। হাজারো মানুষ আগ্রহ নিয়ে খেলা দেখতে যেতো। সমাজপতিরা এসব খেলার আয়োজন করতো। চ্যাম্পিয়নদের দেয়া হতো কাপ(ট্রফি), মেডেল ও শোনা যেতো জয়ধ্বনি। সাম্প্রতিক সময়ে এসব আয়োজন করলেই ঘটে উশৃংখলা ও মারামারির ঘটনা।

বিগত দশকে হাডুডু খেলার বড় প্রতিযোগিতা তেমন দেখা যায়নি।


গোপালপুর সরকারি কলেজের সাবেক জিএস মারুফ হাসান জামী বলেন, ছোট বেলায় দেখতাম আমাদের গ্রামে হাডুডু খেলার আয়োজন হলে ঈদের মতো ইমেজ তৈরি হতো। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তিনিও সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। 

আমরা সন্তানদের ধুলাবালি থেকে দুরে রাখতে পছন্দ করি, তাই এসব খেলার প্রতি নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলা বিলুপ্তির পথে।


গোপালপুর সুতি ভিএম পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা ও ক্রীড়া শিক্ষক গোলাম রায়হান বাপন বলেন, আগের মানুষ ছিলো কর্মঠ ও শক্তিশালী ছিল তাই গ্রামীণ খেলাধূলা টিকিয়ে রেখেছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা মোবাইলে বেশি আসক্ত তাই আধুনিক খেলায় আগ্রহী বেশী। স্কুল পর্যায়ে কাবাডি খেলায় উপজেলার হাতেগোনা দুই একটা দল ছাড়া অংশ নিতে চায় না।



SHARE THIS

Author:

সঠিক তথ্য পেতে সবসময় সমাবেশ ডটকমের সাথে থাকুন।

0 মন্তব্য(গুলি):