মো. রুবেল আহমেদ
ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নির্দশন ও গুনীজনেরা টাঙ্গাইল জেলার ইতিহাসকে করেছে নানাভাবে সমৃদ্ধ। ধনবাড়ী একটি প্রাচীন জনপদ ও একসময়ে জমিদারির জন্য বিখ্যাত।
মোঘল সুবেদার ইসলাম খানের শাসনচলাকালে সেনাপতি ইস্পিঞ্জার খা ধনবাড়ী আক্রমন করে দখল নেন। তারাই জমিদার বাড়ির ৩০বিঘা দিঘীর পাড়ে সুদৃশ্য, স্থাপত্য শিল্পের অপরুপ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
কালের পরিক্রমায় ধনবাড়ী জমিদারির দায়িত্বে আসেন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
তেলাওয়াতরত হাফেজ আব্দুল ওয়ারেছ জানান, অবসরে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী মসজিদের সামনে পুকুর ঘাটের এই স্থানে বসে কোরআন তেলাওয়াত শুনতেন। মৃত্যুর আগে তিনি ওসিয়ত করে যান এখানে যেন তার কবর দেয়া হয় ও কবরের পাশে টানা কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। ওসিয়ত অনুযায়ী তিনি মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন ৫জন হাফেজ এখানে কোরআন তেলাওয়াতের দায়িত্বে আছেন।
হাফেজ কামরুজ্জামান জানান, তিনি ২৬বছর যাবৎ এখানে দায়িত্বে আছেন। ৯৫বছর ধরে নামাজের সময় ব্যতীত বাকি সময় টানা কোরআন তেলাওয়াত চলছে।
অত্র মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতী মো. ইদ্রিস হোসাইন বলেন, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী নবাব মঞ্জিলের পাশে জনকল্যাণমূলক ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়েন ও সম্পদ ওয়াকফ করে যান। তিনি ছিলেন হযরত আব্দুল কাদের জিলানীর বংশধর।
ময়মনসিংহ থেকে আসা লিমা আক্তার বলেন, লোকমুখে শুনে মসজিদটি দেখতে এসেছি। সুন্দর পরিবেশে এতো সুন্দর মসজিদ দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
জানা যায়, দিনরাত আলাদা শিফটে একেকজন কোরআন পাঠের দায়িত্ব থাকেন। বর্তমানে হাফেজ আব্দুস সামাদ, হাফেজ মো. কামরুজ্জামান, হাফেজ ওমর ফারুক, হাফেজ মো. ওয়ারেজ আলী নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াতের জন্য নিয়োজিত রয়েছেন।
বর্তমানে একটি পদ শূন্য রয়েছে। এদের কেউ অনুপস্থিত থাকলে মসজিদের পাশেই হিফজখানা থেকে ছাত্রদের দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, ৭০০ বছর আগে নির্মিত নওয়াব আলীর কবরের পাশের দৃষ্টিনন্দন, মার্বেল পাথরে কারুকার্য খচিত এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন। অনেকেই মনের আশা পূরণে এই মসজিদে বিভিন্ন মানত করে থাকেন। মসজিদের পশ্চিম পাশে অনেকগুলো পুরনো কবরের উপরে মাইকের হর্ণের মাধ্যমে সেই তেলাওয়াতের সুর পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল ৬৫ বছর বয়সে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী মারা যান।
আগে ট্রাষ্টের মাধ্যমে, ইমাম, মুয়াজ্জিন, হিফজখানা ও তেলাওয়াতকারি হাফেজদের বেতন পরিশোধ করা হলেও এখন মসজিদের আয় থেকেই বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):