মো. রুবেল আহমেদ,
স্টিফেন হকিং বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন চেষ্টা থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোন সমস্যা নয়। তার চিন্তার জগৎ ছিল অপরিসীম, হুইল চেয়ার বসে কৃত্রিম কণ্ঠে কথা বলেও তিনি পৌঁছে যান তাঁর চিন্তার সর্বোচ্চ শিখরে। ২০শ শতকের অন্যতম সেরা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীদের একজন হিসেবে গণ্য করা তাকে।
প্রচলিত সমাজে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম মানেই পরিবারের বোঝা। নিম্ন মধ্যবিত্তের পরিবারের সন্তান হলেতো তাকে পাঠানো হয় অন্যের দুয়ারে ভিক্ষার ঝুলি হাতে। প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিয়েছে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের কাজীবাড়ীর বাসিন্দা মীর সাজ্জাদ হোসেন ও কাকলী পারভিন দম্পতির প্রথম সন্তান আশরাফুল আলম সামি (১৭)।
অদম্য মেধাবী সামি বর্তমানে গোপালপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র।
হাত, পা একদম কঞ্চির মতো চিকন, মুখ বাঁকা স্পষ্ট কথা বলতে পারে না। কিছুটা শ্রবণ শক্তিহীন সামির জন্ম ২০০৬সালে। দাঁড়ানোর সক্ষমতা না থাকায়, বসে হাতের উপর ভর করেই এগিয়ে চলেন তিনি।
বাবা মীর সাজ্জাদ হোসেন পেশায় গাড়ি চালক, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনিও বর্তমানে কর্মক্ষম নয়, মা কাকলি পারভীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পিএসসি,জেএসসি ও এসএসসিতে সামি পেয়েছে জিপিএ ফাইভ। এপর্যন্ত ৩টি ট্যালেন্টপুলসহ মোট ৭টি বৃত্তি পেয়েছে!
রান্নাবান্না, ছোট সাইকেল চালানো, ক্রিকেট ব্যাটিং, কেরাম, কম্পিউটার চালানো, গাছে উঠায় পারদর্শিতা ছাড়াও অনলাইনে সার্ভের কাজ করে বিগত ৩মাস আয় করেছেন প্রায় ৮০হাজার টাকা।
খাতায় লিখে সামি জানান, আমেরিকান ওয়েবসাইট ফ্রিক্যাশ, সার্ভেজুনকি সহ অন্যান্য সাইটে সার্ভের কাজ করে অনলাইন আয়ের টাকায় ১টি ল্যাপটপ, ২টি স্মার্টফোন ও বাসার আইপিএস কিনেছেন। পড়াশোনায় মাষ্টার্স সম্পন্ন করে, ভবিষ্যৎ এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে আগ্রহী।
মা কাকলি পারভীন বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ছেলেকে নিয়ে ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো, তাই কোলে করে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতাম। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে নয় শুরু থেকেই সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়িয়েছি। ছোট থেকেই ছেলের মেধা স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের মুগ্ধ করতো। ছেলেকে মাষ্টার্স সম্পন্ন করাতে চাই। সরকার ওর প্রতি সদয় হয়ে যদি আইটি ডিপার্টমেন্ট বা কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি ব্যবস্থা করে দেয় তবেই আমার কষ্ট সার্থক হবে।
সূতী ভিএম সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতিকুর রহমান বলেন, সামিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, ওর মা কোলে নিয়ে বিদ্যালয়ে দিয়ে যেতো, পরবর্তিতে একাই সাইকেল চালিয়ে আসতো। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ওর মেধা আমাকে মুগ্ধ করতো। আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন আমরা খুব বেশি খরচ ওর থেকে নিতাম না। আমার বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। ওর মেধা অনুযায়ী ভালো কোন চাকরি পেলে আমি অনেক খুশি হবো।
গোপালপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. খালেকুজ্জামান বলেন, আশরাফুল আলম আমার কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র, ওর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও অনেক মেধাবি ছাত্র।
0 মন্তব্য(গুলি):