বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

যমুনায় যেমন আছে নৌকার মাঝিরা

 

মোঃ রুবেল আহমেদ

ভাঙনপ্রবণ যমুনা নদী বছরের অর্ধেকটা সময় অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়‌। পানি শুকিয়ে এলে বা যমুনায় জেগে উঠা নতুন চরে শুরু হয় বসতি স্থাপন। এছাড়াও ধান, পাট, ঘাস, বিভিন্ন ধরনের কালাই, সজ,বাদাম, ভুট্টার চাষাবাদ হয়। চরাঞ্চলে চলাচলের একমাত্র বাহন হলো নৌকা। শুকনো মৌসুমে দুর্গম চরে ঘোড়ার গাড়ি, মোটরসাইকেলে কিছুটা পথ চলাচল করতে পারলেও নৌকায় নদী পার হতেই হয়। যুগের পর যুগ নদীর সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকে চরাঞ্চলের হাজারো মানুষ। বর্ষা মৌসুমে যমুনায় বাড়ে পর্যটকের আনাগোনা। 
টাঙ্গাইলের গোপালপুরের নলিন বাজার নৌকার ঘাট থেকে ছেড়ে যায় বঙ্গবন্ধু সেতু, সিরাজগঞ্জের চায়না বাঁধ, সোহাগপুর পার্ক ও কাশফুল দেখতে ভ্রমণের নৌকা। জরুরী রোগী নিয়ে ভুঞাপুর ও এনায়েতপুর হাসপাতালে যেতেও ব্যস্ততা বেড়ে যায় নৌকার মাঝিদের । শুশুয়া, গাবসারা, বিহারী চরসহ বিভিন্ন চরের উৎপাদিত ফসল ও গবাদি পশু বিক্রি করতে আসতে হয় সোমবারের সাপ্তাহিক নলিন হাটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে নলিন ঘাট থেকে ৩০-৩৫টি নৌকা ভাড়ায় নিয়মিত চলাচল করে । শুকনো মৌসুমে কমে ৫টি হয়ে যায়।
কয়েকজন নৌকার মাঝির সাথে কথা হয় । তারা জানান, বছরের ছয়মাস নৌকা চালিয়ে তারা দৈনিক ৩০০ থেকে ২হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। শুকনো মৌসুমে তারা কৃষি কাজ বা অন্য পেশায় যুক্ত হন।
মাঝিরা জানান, একসময় যমুনা নদীতে নিয়মিত নৌকা ডাকাতির ঘটনা ঘটতো, এখন সেই ঘটনা আর ঘটে না‌।
শুশুয়া গ্রামের মাঝি এরশাদ আলী বলেন, মাঝারি নৌকা বানাতে ২লাখ ও বড় নৌকা বানাতে ৫লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। রিজার্ভ ট্রিপে আয় ভালো হয়। বাসুদেবকোল, গোবিন্দপুর, গোড়াইপাড়া, শুশুয়া লাইনে নৌকা চালাই, শুকনো মৌসুমে দ্বিগুণ সময় বেশি লাগে গন্তব্যে পৌঁছাতে কিন্তু যাত্রীদের থেকে আগের ভাড়াই নিতে হয়।
চর শুশুয়া গ্রামের মাঝি সবুর উদ্দিন অনেক জরুরী রোগী নিয়ে সিরাজগঞ্জ হাসপাতাল বা ভুঞাপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার স্মৃতি বর্ননা করেন। এছাড়াও বর্ষাকালে চরে মৃতদেহ দাফনের জায়গা থাকে না, সেগুলো বহন করে যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় দাফন করতে হয় বলে জানান।
মধ্যে শাখারিয়া গ্রামের মাঝি ছকের আলী জানান, আমি ছয়মাস নৌকা চালাই এবং ছয় মাস কৃষিকাজ করি। আমার নৌকায় বেশি সময় রিজার্ভে চলে। ৫সন্তান নিয়ে ভালোই চলছে পরিবার। তবে নদীর মধ্যে তেল শেষ হয়ে গেলে বা শ্যালোর ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেলে বিপাকে পরতে হয়।

হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার হীরা বলেন, চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য নৌকা দিয়ে নলিন সাপ্তাহিক হাঁটে বিক্রি করতে আসে। তাদের যেন কোন সমস্যা না হয় বিষয়টি আমি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করি। নৌকার ঘাটে মাঝিদের থেকে কোন টাকা-পয়সা আদায় করা হয় না।

SHARE THIS

Author:

সঠিক তথ্য পেতে সবসময় সমাবেশ ডটকমের সাথে থাকুন।

0 মন্তব্য(গুলি):