মো. রুবেল আহমেদ
১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইলের গোপালপুর সূতী ভিএম পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসাবে পরিচিত।
দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে যেমন বিদ্যালয়টির রয়েছে অসামান্য অবদান। তেমনি ভাষা আন্দোলন সহ মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রয়েছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। দেশ পরিচালনার কাজে প্রশাসনিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানে রয়েছে এই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় । ভাষা সৈনিক হযরত আলী এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বিশাল ১০ফুট বাই ১৫ফিট আলমারিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে শত শত ট্রফি। জায়গায় না থাকায় অন্যান্য আলমারি ও টেবিলেও রাখা হয়েছে ট্রফি।
জানা যায়, ফুটবলে জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ২০০৭, ২০০৯, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৫সালে উপ অঞ্চল, অঞ্চল ও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১১সালে রানার্সআপের গৌরব অর্জন করে বিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এছাড়াও নারীরা ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩সালে উপ অঞ্চল, অঞ্চল ও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়।
এছাড়াও ছেলেরা আন্তঃ বিদ্যালয় ও মাদরাসা প্রতিযোগিতায় ২০০৬সাল থেকে ২০১১সাল পর্যন্ত টানা ৬বার জেলা চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়াও মেয়েরা ২০১১ থেকে ২০১৮সাল পর্যন্ত টানা ৮বার জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়।
ক্লিয়ার ম্যান স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে এছাড়াও ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের বুট ক্যাম্পে এই বিদ্যালয়ের ১০জন ছাত্র অংশ নেয়ার সুযোগ পায়।
আন্তঃ উপজেলা ফুটবলে ২০১১সালে চ্যাম্পিয়ন বিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা। এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরো জেলায় ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে বিদ্যালয়টি।
এই বিদ্যালয় থেকে উঠে আসা খেলোয়াড় কৃষ্ণা রাণী সরকার, রবিউল হাসান, মনজুরুল রহমান মানিক, নাজমুল, রাসেল, পিয়াস, মমিন, সোমা, রুমা, মাহফুজা, জোসনা, ইতি, নীতি সহ অনেকেই জাতীয় ফুটবল দলসহ বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
টাঙ্গাইলের জেলা দলের হয়ে খেলে ডানোন কাপ ফুটবলে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে, এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন কৃতি খেলোয়াড় দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে যাওয়ার সুযোগ পায়।
ক্রিকেটে বিদ্যালয়টি আন্তঃ বিদ্যালয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ২০০৫সালে চ্যাম্পিয়ন এবং আন্তঃ বিদ্যালয় ও মাদরাসা ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় একাধিকবার রানার্সআপ হয়।
ভলিবলে ২০১৩ থেকে ২০১৮সালপর্যন্ত জেলা চ্যাম্পিয়ন, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে অঞ্চল চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়।
টেবিল টেনিসে মেয়েরা ২০১৪সালে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়।
বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, হ্যান্ডবল, কাবাডি সহ বিভিন্ন খেলায় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। ক্যারামেও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার রয়েছে।
ম্যানেজিং কমিটি সদস্য ও গোপালপুর সরকারি কলেজের শিক্ষকরাও ব্যাপক উৎসাহ যুগিয়েছেন সাফল্যর পিছনে। ৯০এর দশক থেকেই এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্রীড়ায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
বিদ্যালয়ের ক্রীড়া ও শরীর চর্চা শিক্ষক ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারী গোলাম রায়হান বাপন বলেন, অত্র বিদ্যালয়ের ক্রীড়ায় সাফল্যের পিছনে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের ব্যাপক অবদান রয়েছে। এছাড়াও জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সাবেক কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন সাহেবেরও অবদান রয়েছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আতিকুর রহমান বলেন, আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় ভালো করায় বিদ্যালয়ের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। জাতীয় দলে খেলার জন্য আরো ভালো মানের খেলোয়াড় তৈরির চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
0 মন্তব্য(গুলি):