মো. রুবেল আহমেদ
পরিশ্রম দ্বারা মানুষ সৌভাগ্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে পারে। যথােপযুক্ত শ্রমের দ্বারাই মানবজীবনের সৌভাগ্যের সূচনা হয়। কৃষিখাতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম ও টক বড়ই চাষ সাফল্যের শিখরে পৌছে দিয়েছে টাঙ্গাইলের সিদ্দিক হোসেনকে।
সময়টা ২০০৩সাল পৈতৃক জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখে, ৪লাখ টাকা ঋণ নেন টাঙ্গাইলের সখিপুরের ইন্দারজানি গ্রামের সিদ্দিক, ভাগ্যবদলের আশায় দক্ষিণ আফ্রিকার পাড়ি দিতে সেই টাকা দালালের হাতে তুলে দেন। একসময় তিনি বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন। এদিকে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে না পারায়, পৈত্রিক জমিসহ জামিনদার চাচাতো ভাইয়ের ৩০০ডিসিমল জমি নিলাম ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করে ব্যাংক। পরবর্তীতে অন্য পৈতৃক জমি বিক্রির টাকায় ঋণ পরিশোধ করে, কোন রকম রক্ষা পান নিলাম থেকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌছায়, ছেলে খাওয়ার জন্য দুই টাকা চাইলেও দেয়ার সামর্থ্য ছিলো না তার। এসব মনে করে প্রতিবেদকের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ২০০৭ সালে বিকল্প নার্সারি নামে পাহাড়ি লাল মাটিতে গাছের চারা উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেন তিনি।
পরবর্তীতে টেলিভিশনে বাউকুল চাষের প্রতিবেদন দেখে, ময়মনসিংহ থেকে বাউকুলের চারা এনে ২একর জমি লিজ নিয়ে ২০০গাছ লাগান।
একপর্যায়ে বাউকুলের চাহিদা কমে যায়, এতে খরচ উঠাতে হিমশিম খেতে হয়। পরবর্তীতে ঢাকা ও গাজীপুরের অসংখ্য নারী পোশাককর্মীদের টার্গেট করে শুরু করেন টক বড়ই চাষ। বর্তমানে ৩৯একর পাহাড়ি লাল মাটি লিজ নিয়ে টক বড়ই চাষ করেন বলে জানিয়েছেন সিদ্দিকুর হোসেন। গত মৌসুমে মোট ৯৭লাখ টক বড়ই বিক্রি করেছেন বলে জানান। এই মৌসুমে অতিরিক্ত গরমের কারণে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায়, কম ফলন হওয়ায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার টক বড়ই বিক্রি করেছেন। এতে তার অর্ধেক টাকা জমি লিজ নেওয়া, গাছের পরিচর্চা ও পরিবহনে খরচ হয়।
সারাবছর পরিচর্যার জন্য নিয়মিত ১৫জন শ্রমিক দরকার হয় এবং বড়ই তোলার মৌসুমে দ্বিগুণ শ্রমিক দরকার হয়।
মৌসুমের শুরুতে ২২০টাকা কেজি দরে বড়ই বিক্রি হলেও এখন ৫০টাকা কেজি বিক্রি করা যায়।
ঢাকার কারওয়ানবাজার, সাভার, বাইপাইল, গাজীপুর, কোনাবাড়িসহ বিভিন্ন আড়তে বড়ই বিক্রির জন্য পাঠান তিনি। "বিকল্প চাষী সিদ্দিক চাষী" শ্লোগানে নিজস্ব মোড়কে বড়ই বাজারজাত করেন তিনি।
সিদ্দিক হোসেন বলেন, দালাল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর বাপ, দাদার পেশা কৃষিকেই আপন করে নেই। প্রযুক্তি, পরিশ্রম ও সততা এই তিনের সমন্বয়ে আজকের এই সফলতা অর্জন করেছি। বড়ই গাছে বিভিন্ন ছত্রাকের আক্রমণ হয়, এগুলোর সময়মতো চিকিৎসা দিতে না পারলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। টক বড়ই ছাড়াও আপেল কুল, পেয়ারা, লটকন ও আম চাষ করছেন তিনি।
ইতিমধ্যেই একাধিক টেলিভিশনের কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানান। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য গবেষণা করছেন। এছাড়াও ভবিষ্যতে নিজ উদ্যোগে একটি কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
ইন্দারজানি টিকুরিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন বলেন, সিদ্দিক কাকা ভালো মানুষ, অনেক কষ্ট করতে দেখেছি তাকে। এখন গ্রামের অনেক পুরুষ ও মহিলারা কাকার বাগানে কাজ করার সুযোগ পায়। কাকার সততা ও সাফল্য নিয়ে আমরা গর্বিত।
নারী পোশাককর্মীদের টার্গেট করে শুরু করেন টক বড়ই চাষ। বর্তমানে ৩৯একর পাহাড়ি লাল মাটি লিজ নিয়ে টক বড়ই চাষ করেন। বড়ই চাষ করে কোটিপতি সখিপুর সিদ্দিক
0 মন্তব্য(গুলি):