সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

চরের শস্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে দরকার প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি


মো. রুবেল আহমেদ

বর্ষাকালে যমুনা নদীর স্রোতের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা, চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন অনেকটাই কঠিন। 

নদীর একুল গড়ে তো ওপার ভাঙ্গে। ধু ধু বালুচরে নানা প্রতিকূলতায় বেঁচে থাকা, চরাঞ্চলের মানুষ শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবায় অনেকটাই পিছিয়ে। প্রতিকুলতার কারনে ভালো মানের শিক্ষক ও চিকিৎসকদের চরাঞ্চলের প্রতি অনীহা পুরনো। নদী অববাহিকায় জেগে উঠা চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সমতলের কৃষকরা ধান, পাট, সরিষা চাষাবাদে সীমাবদ্ধ থাকলেও । টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার একটি অংশ এবং ভুঞাপুর উপজেলার বৃহৎ অংশ যমুনা নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা; নানান প্রতিকুলতা ডিঙ্গিয়ে উৎপাদন করে সব ধরনের শাক সবজি ও শস্য। যমুনা নদীর চরের বেলে মাটিতে বাম্পার ফলন হয় ধান, পাট, সরিষা, বাদাম, ভুট্টা, মরিচ, তিল, তিষি, কাউন। খেসারি, মশারি, মাস কালাই, মুগসহ বিভিন্ন রকমের ডাল। জিরা ব্যতিত পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, আদা, কালো জিরা, ধনিয়াসহ সবধরনের মশলা। গবাদিপশুর খাদ্য হিসাবে বিভিন্ন জাতের ঘাস এবং তামাক পাতাসহ বিভিন্ন ধরনের অর্থকরী ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এছাড়াও চরাঞ্চলের কৃষকদের গবাদিপশুর লালনপালনে সফলতা চোখে পড়া মতো।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছরের ৩মাস পানির নিচে ডুবে থাকা চরাঞ্চল জাগলে, শুরু হয় ধান, বাদাম, ভুট্টা লাগানোর তোরজোর। চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষে ব্যাপক সফলতা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান কৃষকরা।

শীত মৌসুমে, ফলে সব রকমের শাকসবজি, ডাল এবং মসলা।  বসন্তে শুরু হয় পাট, তিল, তিসি বুননের তোড়জোড়। 

ইদানিং ক্যাপসিকাম চাষেও ঝুঁকছে তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব ফসলের বাম্পার ফলন হয় চরের বালু মাটিতে। অতি খরা এবং শৈত্যপ্রবাহে ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। হাত বাড়ালেই মিলে না সার, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ। এসবের জন্য যেতে হয় নলিন হাট, গোবিন্দাসী হাট এবং ভুঞাপুর শহরে। চরাঞ্চলে সেচ সঙ্কট একটি বড় সমস্যা।

দুর্গম চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক, নৌকার উপর নির্ভরশীল। কৃষকরা উৎপাদিত ফসল চর শুশুয়া, সোনামুই, নলিন,পিংনা গোবিন্দাসীসহ চরের কয়েকটি হাটে স্বল্প দামেই বিক্রি করে থাকেন। এতে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া মধ্যস্বত্বভোগী পাইকাররাই বেশি লাভবান হয়।


চরাঞ্চলের কৃষকদের দাবি, আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকারের উচিৎ চরাঞ্চলের কৃষির প্রতি বিশেষ নজর রাখা। কৃষিতে ভর্তুকি, ঋণ ও প্রণোদনা বাড়ানো। সমতলের কৃষি এখন অনেকটাই প্রযুক্তি নির্ভর। এদিক থেকেও চরের কৃষকরা অনেক পিছিয়ে। চরাঞ্চলের কৃষিতে প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ানো এবং উৎপাদিত পণ্যের সঠিক বিপণন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা। 



শুশুয়া ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি মোমিনুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে ভর্তুকি মূল্যে সার, বীজ প্রদান করার পাশাপাশি। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে । কালাই মাড়াই, ভুট্টা মাড়াই মেশিনসহ কৃষি প্রযুক্তির সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।


SHARE THIS

Author:

সঠিক তথ্য পেতে সবসময় সমাবেশ ডটকমের সাথে থাকুন।

0 মন্তব্য(গুলি):