মো. রুবেল আহমেদ,
একজোড়া হালের গরু, লাঙ্গল-জোয়াল বাড়িতে থাকলেই প্রকাশ পেতো কৃষকের আভিজাত্য। আদিম কৃষিযন্ত্র লাঙ্গলে হালচাষ নিয়ে রচিত হতো অসংখ্য গান। সেসময় গরু-লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ আর মই দেওয়ার দৃশ্য সবার নজর কাড়তো। লাঙ্গলেই মঙ্গল রাজনৈতিক শ্লোগানটি কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়েছিল। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গৃহস্থের বাড়িতে কেউ টানা ১২বছর কাজ করলে, সেই বারো মাসি কামলা (শ্রমিক)কে ২বিঘা ধানের জমি, এক জোড়া হালের গরুসহ লাঙ্গল-জোয়াল উপহার দেয়ার প্রথা চালু ছিল।
কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু, লাঙল, জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে যেতেন মাঠের জমিতে হালচাষ করার জন্য। কালের পরিক্রমায় আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত যান্ত্রিক ফলার কাছে জৌলুস হারিয়েছে কাঠের লাঙ্গল। পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে কৃষিতে, অল্প সময়ে অধিক জমিতে চাষ করে দিচ্ছে পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টরগুলো।
বিলডগা গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক শাহজাহান আলী আক্ষেপ করে বলেন, আগে সকাল দল বাইন্ধা পাড়ার চাষীরা মিলে, হাইলা গরুসহ নাঙ্গল জোয়াল কাঁধে নিয়ে জমিতে হাল বাইতে যাইতাম। এখন ট্রাক্টর আইছে ভালাই অইছে। কিন্তু কৃষকদের মধ্যে যে হুজুগ ও বন্ধন ছিলো, তা আর নাই। যেনু ট্রাক্টর যাবার পারে না সেখানে হাল বাওনের জন্য নাঙ্গলটা রেখে দিছি। এখন হালের গরু প্রচলন না থাকায় হাতেই নাঙ্গল টানতে হয়।
গোপালপুরে হাটে কাঠের পণ্য ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন,
এক সময় লাঙ্গলের অনেক চাহিদা ছিল তাই নিয়মিত হাটে বিক্রি করতাম, এক লাঙ্গল এর কোন চাহিদাই নাই।হঠাৎ হাতেগোনা ২/১জনে চায়, তাই লাঙ্গল আর আনি না।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দিদারুল ইসলাম বলেন, গরু দিয়ে হালচাষ গ্রামীণ সমাজের কৃষকদের ঐতিহ্য ছিল, অনেকে হালচাষ করার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে লাঙ্গল আজ বিলুপ্তির পথে। কৃষকরা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলায়, ঐতিহ্য ধরে রাখা এখন প্রায় দুরূহ।
0 মন্তব্য(গুলি):